রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রাজাকার স্লোগান কঠোর অবস্থানে নিয়ে গেছে ক্ষমতাসীনদের

ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সরকার তথা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আর কোনো সহানুভূতি ও সহনশীলতা দেখাবে না। গত রবিবার বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর রাতে তার প্রতিবাদে নিজেদের রাজাকার উল্লেখ করে আন্দোলনকারীদের দেওয়া স্লোগানে ক্ষমতাসীনদের সব সহনশীলতা ও সহানুভূতি উবে গেছে। এই আন্দোলন দমনে এখন কঠোর অবস্থানে যাওয়া ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

কোটা আন্দোলন মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণে গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয়, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনও।

ওই বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবির মতো ধৃষ্টতা দেখানো এবং নিজেদের রাজাকার উল্লেখ করে দেওয়া স্লোগানের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের দমন করার নীতিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাস্তা দখলমুক্ত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ছাড়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে নানাভাবে সরব হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের তৎপরতা বাড়িয়ে তুলতে বলা হয়েছে। আর এসব পদক্ষেপ সরকারের কঠোর অবস্থানের দিকে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত করে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকালের বৈঠকে আন্দোলন মোকাবিলায় ছাত্রলীগের প্রস্তুতি নিয়ে নেতারা জানতে চান। ঢাবি ক্যাম্পাসে যাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে না পারেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

একটি সূত্র জানায়, প্রয়োজনে অল্প সময়ের জন্য হলেও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা যায় কি না, তা ভাবতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে জানানো হয়েছে। গত রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তবে ক্যাম্পাস বন্ধ করার ঘোষণা কতখানি যুক্তিযুক্ত হবে, সেটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান তথা দাবি দিয়ে ভিন্ন পথে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সেখান থেকে দেশবিরোধী স্লোগানও তারা দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না তো রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?” এই বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। যারা এই বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করছেন, তারা কীসের মেধাবী? তারা চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত হন কী করে?’

গতকালের বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন বলেন, ‘গত রবিবার রাতের পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। সরকার সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখিয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সহনশীলতা বুঝতে চেষ্টা করছেন না। পরিস্থিতি এভাবে চলতে পারে না। সরকার বসেও থাকবে না। অনেক সহানুভূতি দেখানো হয়েছে।’ ছাত্র আন্দোলন সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে বলেও জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা।

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনের নেতৃত্বে আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান। তিনি জানান, তারা কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা করছেন। এ নিয়ে গতকাল সংগঠনটি বৈঠকও করেছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব ছাত্রলীগকে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণাও আসতে পারে। এ ছাড়া আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাস পেরিয়ে রাজপথে অবস্থান নিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এর বাইরে এই আন্দোলনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো তা ঠেকানোর জন্য রাজপথে নামবে।

গতকাল বৈঠক শেষে বেলা ২টার পরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলন ও তাতে যে বক্তব্য কতিপয় নেতা রেখেছেন, তার জবাব ছাত্রলীগ… যারা আত্মস্বীকৃত রাজাকার, নিজেদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছে গত রাতে (রবিবার রাতে), তার জবাব তারাই (ছাত্রলীগ) দেবে। ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত সীমিত থাকবে। আমরা দেখি রাজনৈতিকভাবে কারা প্রকাশ্যে আসেন। তখন দেখা যাবে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’

আওয়ামী লীগের মনোভাব বুঝতে পেরে গতকাল বেলা ২টার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যুক্ত হন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ এবং যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মী ও সাবেক ছাত্রনেতারাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন রবিবার বিকেলে, কিন্তু সেটা নিয়ে মধ্যরাতে মিছিল বের করা এবং হল থেকে নারী শিক্ষার্থীদের বের হওয়াকে রাজনৈতিক ইন্ধন হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিকেলের বক্তব্য নিয়ে মধ্যরাতে প্রতিবাদ সন্দেহজনক। এতে রাজনৈতিক উপাদান যুক্ত হয়েছে। দলটির এক নেতা বলেন, ‘স্লোগানে প্রমাণ করেছে আন্দোলনে রাজনীতি আছে। আমরা তাদের ওপর দৃশ্যমান চাপ সৃষ্টি করার জন্য সুযোগ খুঁজছিলাম। স্লোগানটা সে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।’

আরেক নেতা বলেন, ‘বৈঠকে (গতকাল ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের “রাজাকার” ইস্যুটা সামনে এনে প্রচার-প্রচারণা চালানোর। এটিকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বলা হয়েছে। আর এ স্লোগান দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরাতে ছাত্রলীগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।’

আওয়ামী লীগের গতকালের বৈঠকে উপস্থিত থাকা দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’

চীন সফরের বিস্তারিত তুলে ধরতে গত রবিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না (চাকরিতে কোটা)? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে। তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে, মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না। অপরাধটা কী?’

প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের অবমাননা করেছেন দাবি করে রবিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেন। সেখানে তারা স্লোগান দেন ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার, আমি কে… তুমি কে… রাজাকার, রাজাকার। কে বলেছে… কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’ বিক্ষোভ শেষে আন্দোলনকারীরা হলে ফিরলে ‘রাজাকার’ স্লোগানের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মিছিল করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, সংসদ সদস্য সাঈদ খোকন ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নেতৃত্বে মিছিল হয়। তারা বিভিন্ন জায়গায় মহড়াও দেন।

রবিবার রাতের বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্লোগানের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গতকাল এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘আমার খুব দুঃখ লাগে কালকে যখন শুনি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও বলে তারা রাজাকার। তারা কি জানে ৭১ সালের ২৫ মার্চ সেখানে কী ঘটেছিল। ৩০০ মেয়েকে হত্যা করেছিল। ৪০ জনকে ধর্ষণ করেছিল, এদের ধরে পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল।’

গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক কর্মসূচিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতসহ যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢুকেছে। তাদের লোকজন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবেগ ব্যবহার করে কেউ ফায়দা লুটতে চাইলে সরকার তা কঠোর হাতে প্রতিহত করবে।’

রবিবার রাতের বিক্ষোভের সময় নিজেদের রাজাকার উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্লোগানের প্রতিবাদে ক্ষমতাসীন দল ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও বিবৃতি দিচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, এডিটরস গিল্ড, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এবং অভিনয়শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ। এসব বিবৃতি আন্দোলনকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জনদুর্ভোগ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো হলে তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION